ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় গৃহবধূ মেরিনা খুনের ঘটনায় স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  চকরিয়ায় যৌতুকের জন্য স্বামীর হাতে মেরিনা আক্তার (২২) নামে এক গৃহবধূ খুন হওয়ার ঘটনায় ঘাতক স্বামী মিজানুর রহমানসহ চারজনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের পিতা মনোর আলম বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত/৩) এর ১১ (ক)/৩০ ধারায় এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ঘাতক মিজানুর রহমান ছাড়াও তার ভাই মো, আরফাত, পিতা মো. হাসান আলী ও মা নুরুন্নাহার বেগমকে আসামী করা হয়েছে। আসামীরা সবাই উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরণদ্বীপ চারাইল্যাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তুষ্ট লাল বিশ্বাস।

থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বাদী দাবি করেন, আমার মেয়ে মেরিনা আক্তারের (২১) সাথে গত ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল ইসলামী শরিয়ত মতে নিকাহনামা মূলে বিয়ে হয় চিরিঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরণদ্বীপ চারাইল্যাপাড়া গ্রামের মো. হাসান আলীর ছেলে মিজানুর রহমানের। দাম্পত্য জীবনে গত ৭ মাস পূর্বে তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। পরবর্তীতে তার নাম রাখা হয় তোফাজ্জল হোসেন আদর নামে।

মেরিনার পিতা আরো দাবী করেন, বিয়ের পর কিছুদিন আমার মেয়ে স্বামীর সংসারে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার জীবন অতিবাহিত করলেও গত এক বছর পূর্ব থেকে যৌতুকের টাকার জন্য আমার মেয়ের উপর চাপ সৃষ্ঠি করে স্বামীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। এক পর্যায়ে আমার মেয়ে মেরিনার সংসার জীবনের কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়ে তার স্বামীর হতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিই। এছাড়া গত ৭ মাস পূর্বে আমার মেয়ের ডেলিভারীর সময় সিজার অপারেশন হলে হাসপাতালে খরচ বাবত আরো ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করি। পরবর্তীতে তারা যৌতুক হিসেবে আরো ১ লাখ টাকা দাবী করলে আমি তাতে অপারগতা প্রকাশ করি। গত ১/১২/২০১৯ ইং স্বামী ও শশুড় বাড়ির লোকজন মেয়ের বিয়ের সময় দেন মোহর হিসেবে দেয়া ৪ ভরি স্বর্ণালংকার জোর পূর্বক ছিনিয়ে নিতে চাইলে আমার মেয়ে তাদের বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা আমার মেয়েকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে হত্যার হুমকি দিলে তাকে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে বিষয়টি মোবাইল ফোনে আমাদের জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মেরিনার স্বামী ও অন্যান্যরা গলাটিপে ও বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে আামার মেয়েকে হত্যা করে। পরবর্তীতে শশুড় বাড়ির লোকজন আমার মেয়েকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাতে মৃত ঘোষনা করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ হাসপাতাল এলাকা থেকে স্থাণীয় জনতার সহায়তায় মেরিনার ঘাতক স্বামী মিজানুর রহমানকে আটক করে। পরে ময়না তদন্ত শেষে আমার মেয়েকে দাফন করা হয়।

নিহত মেরিনা আক্তারের মা দিলনূর বেগম বলেন, বিয়ের পর বিভিন্ন সময় মেয়ের জামাইকে যৌতুক হিসেবে অনেক টাকা দেওয়ার পরও যৌতুকলোভী স্বামী ও তার পরিবারের হাত থেকে আমার মেয়েকে বাচাঁতে পারলাম না। যৌতুকের জন্য আমার মেয়েকে এত অল্প বয়েসে খুন হতে তা কখনো ভাবতেও পারিনি। আমি প্রশাসনের কাছে আমার মেয়ে হত্যার সুষ্ট বিচার চাই।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গৃহবধু মেরিনা হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের পিতা মনোর আলম বাদী হয়ে মেরিনার স্বামীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে পুলিশ স্থাণীয় জনতার সহায়তায় মেরিনার স্বামী ও মামলার প্রধান আসামী মিজানুর রহমানকে আটক করে। মঙ্গলবার বিকালে তাকে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়। ওসি আরও বলেন, এ মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

12

পাঠকের মতামত: